আমাদের দেশে এত দ্রুত তারাবিহ নামাজের পদ্ধতি কে প্রথম শুরু করেছিলো জানা নেই। যেখানে তারাবিহ শব্দের অর্থই বিশ্রাম বা স্থিরতা। সেখানে মাত্র কয়েক মিনিটেই ডান-বাম না তাকিয়ে কী পরিমাণ দ্রুত তারাবিহ নামাজে কুরআন তিলাওয়াত করা হয়, তা বলাই বাহুল্য। তিলাওয়াতে তাড়াহুড়া। জিকির বা দোয়া তাড়াহুড়া। এমনকি মুনাজাতে আরও তাড়াহুড়া।
তারাবিহ নামাজে ছয় দিনে কুরআনের খতম দিতে হবে। বারো দিনে খতম দিতে হবে। পনেরো দিনে খতম শেষ করতে হবে। নির্ধারিত সমযে হাফিজদের প্রতিদিন ১০ রাকাত করে ২০ রাকাত তারাবিহ শেষ করতে হবে। এসব শর্ত দেশের মানুষকে শেখালো কে? তিলাওয়াত করবে হাফিজ সাহেব। সময় নির্ধারন করবে মুসল্লিরা। এ রীতির প্রবর্তক কে? হাফিজদের মধ্যে তারাবিহ কীভাবে দ্রুত শেষ করা যায়, এ নিয়ে থাকে স্নাযুবিক প্রতিযোগীতা। উফ! কী ভয়ঙ্কর জিহালত।
দু’জন হাফিজ তারাবিহ পড়ানোর সময় একজনের মাত্র পাঁচ-সাত মিনিট বিলম্ব হবার কারণে, ওই হাফিজকে মুসল্লিরা করছে চরম অপমাণ। অপদস্ত। তাকে দেয়া হচ্ছে আরো দ্রুত শেষ করবার মানসিক চাপ। কী বিস্ময়কর অপমাণজনক পরিস্থিতি।
এসব কারণে আমাদের দেশসহ ভারত-পাকিস্তানের প্রায় মাসজিদে তারাবিহ নামে চলে চরম ধোঁকাবাজি। নামাজের নামে প্রতারণা। কুরআন তিলাওয়াতের নামে সময়ক্ষেপণ। না তারাবিহর স্থিরতার সৌন্দর্য আছে। না নামাজের খুশু-খুজু আছে। না তিলাওয়াতের আদব আছে। নাই; কিছুই নাই।
শুধু খতম তারাবিহর কথা বলছি? না। সুরা তারাবিহ আরো মারাত্নক। হয়তো কিছু জায়গায় ব্যতিক্রম আছে। না আছে কুরআনের তারতিল, তারতিব। না আছে তিলাওয়াতের সুর, সৌন্দর্য। কী একটা তাড়াহুড়া-তাড়াহুড়া অবস্থা।
আমার পরিচিত একজন আলিম আছেন; বড়ো আলিম। তিনি সারা বছর হাফিজে কুরআনদের গতানুগতিক কথিত এই তারাবিহ বিরোধী। সেই বিরোধীতার খাতিরে তিনি তাঁর বাসার ছাদে করেন সুরা তারাবিহর আয়োজন। ছাত্র জীবনে কয়েকবার তাঁর পেছনে তারাবিহ পড়তে গেছিলাম। এখন পড়ান কিনা জানি না। ভাবছিলাম, তিনিতো আর হাফিজ না; কাজই অসম্ভব সুন্দর ও ধীরস্থিরতার সাথে পড়াবেন তারাবিহ। কী এক বিস্ময়কর যুদ্ধরে বাবা! তিনি রেকর্ড ভঙ্গ করার প্রতিযোগীতায় নামলেন যেন। মাত্র ষোল কী আঠারো মিনিটে ইশা নামাজ-বিতিরসহ তারাবিহ পড়ালেন বিশ রাকাত।
আমার সাথে সেসময় যারা তারাবিহ পড়ছিলো। দেখতাম তারা খুবাই খুশি। গর্ব করে বলতো, আমাদের অমুক হুজুরের কারণে তারাবিহটা আদায় করতে সক্ষম হচ্ছি- খুব সহজে। এই মাথা মোঠা পোলারা বুঝতো না, এটা তারাবিহ নয়; প্রতারণা।
তারাবিহ কীভাবে পড়তে হবে। কেনো পড়তে হবে। কী জন্য পড়তে হবে৷ কীভাবে পড়লে শুদ্ধ হবে৷ এসব ব্যপারে কুরআন-হাদিস ও ফিকহের কিতাবসমূহে পরিষ্কার বর্ণনা আছে। যুগেরপর যুগ এই বর্ণনা, যথাযত আদায় হয়নি আমাদের দেশে। সাথে ভারত-পাকিস্তানেও। কাজই এখন পরিবর্তন জরুরি।
তারাবিহ পড়তে হবে স্থীরতার সাথে। খুশু-খুজুর সাথে। নম্রতা-বিনয়ীর সাথে। আদব-শিষ্টাচারিতার সাথে। তিলাওয়াতের তারতিব-তারতিলের সাথে। ছয় দিনে তারাবিহ মানে প্রতিদিন পাঁচ পারা পড়তে হবে বিশ রাকাতে। পড়ুক। কিন্তু সময় নিয়ে পড়তে হবে। মুসল্লিদের ধৈর্য রাখতে হবে। বারো দিনে তারাবিহ মানে প্রতিদিন দু পারার বেশি তিলাওয়াত করতে হবে। করুক। সময় লাগবে। মুসল্লিদের সময় দিতে হবে।
শেষ রোজা পর্যন্ত তারাবিহ হোক। প্রতিদিন এক পারা করে তিলাওয়াত করুক। তিলাওয়াতের তারতিব-তারতিল আদায় করলে তাও সময় লাগবে। অনেক সময়। লাগুক। মুসল্লিরা চলে যাবে? চলে যাক। যে আল্লাহর প্রেমে দাঁড়াতে পারে না রমজানের রাতে। যে আল্লাহর কুরআন শুনতে পারে না তারতিলের সাথে। সুর ও সৌন্দর্যের সাথে। চলে যাক; সে মাসজিদে আর না আসুক।
রোজার মধ্যখানে কুরআনের খতম শেষ। এটার মানে মুর্খরা বুঝে নিয়েছে, তারাবিহ আর নেই। অথবা তারাবিহ আজ থেকে না পড়লে কোনো পাপ নেই। আস্তাগফিরুল্লাহ! কাজই তারাবিহ সুরা হোক বা খতম হোক। পুরো রমজান জুড়ে হোক। অন্তত: কদর পর্যন্ত হোক। ধীরস্থীরতার সাথে হোক।
বই: পরিবর্তন জরুরি
রচনায়: আজিজ রজভী